Home / জাতীয় / চলনবিলের ভাসমান স্কুলল পেল ইউনেস্কোর পুরস্কার
25 10 25 2

চলনবিলের ভাসমান স্কুলল পেল ইউনেস্কোর পুরস্কার

ঢাকা, শনিবার ২৫ অক্টোবর ২০২৫ মাসস

বর্ষাকালে বা বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যায়। তখন সব স্কুল বন্ধ হয়। শিশুরা মাসের পর মাস শিক্ষাবঞ্চিত থাকে। এই অভিজ্ঞতা অনেকের আছে। তবে চলনবিলে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ রেজওয়ান এই সমস্যা সমাধানের চিন্তা করেছিলেন। ২০০২ সালে তিনি স্থানীয় একটি নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর করেন। এটাকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল।

স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান এই স্কুল ইউনেস্কোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছে। শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রসারে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

চলনবিলের সুবিশাল জলরাশি থেকে জন্ম নেওয়া স্থানীয় এই উদ্ভাবন আজ সাক্ষরতা, নকশা ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় প্রেরণা জোগাচ্ছে। নাইজেরিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার মডেল হিসেবে অনুকরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০৫০-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

বর্তমানে ১০০টিরও বেশি নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি এবং ক্লিনিক হিসেবে কাজ করে। এই প্রকল্পটি ২২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে সাক্ষর করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে কয়েকশ মনোনয়নের মধ্যে ইউনেস্কো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। সেগুলো হলো– বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম। ২০তম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফু শহরে অনুষ্ঠিত হয়।

সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজওয়ান এই ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন। সেখানে প্রতিবছর বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত।

ইউনেস্কো এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছে, ‘বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে সাক্ষরতা শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এ ভাসমান স্কুলের সাফল্য।’

এক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ‘শিক্ষা শুধু পড়ালেখা নয়, এটি শান্তি, সমতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলে। আমি আশা করি, সাক্ষরতা ও জ্ঞানের শক্তি দিয়ে আমাদের তরুণরা এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে, যেখানে কোনো দুর্যোগই শিশুর শিক্ষাকে থামাতে পারবে না।’

ফ্রান্সের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশন হিস্ট্রিতে মাইগ্রেশনস অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সিবিশনে ‘বোট স্কুলস অব বাংলাদেশ– ফিউচার দ্যাট ফ্লোটস’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের তথ্যচিত্র ‘বাংলাদেশ টার্নস টাইড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ উইথ ফ্লোটিং স্কুলস’ নির্বাচিত হয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর ফাইনালিস্ট হিসেবে। স্থপতি রেজোয়ানের কাজ স্থান পেয়েছে জুলিয়া ওয়াটসনের বই ‘লো-টেক: ওয়াটারে’। সেখানে বিশ্বের ২২টি আধুনিক ঐতিহ্যভিত্তিক উদ্ভাবন তুলে ধরা হয়েছে।

মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান, বন্যায় মূলত নারী ও কন্যশিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ কারণে প্রকল্পটি তাদের জন্য শিক্ষাকে সহজ, নিরাপদ ও আরামদায়ক করার ওপর জোর দিয়েছে। এমনকি বাড়ির চারপাশ পানিতে ঘেরা থাকলেও পড়াশোনা বন্ধ হয় না।

রেজওয়ান বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ হলো, যন্ত্রের চেয়ে মানুষকে গুরুত্ব দিন। প্রযুক্তি তখনই কার্যকর হয়, যখন তা শিক্ষার্থীদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত থাকে। এ কারণে আমাদের ভাসমান স্কুলগুলো স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়রা– বিশেষ করে নারী ও সাবেক ছাত্রীরা এটি পরিচালনা করেন।’

About Mastary Sangbad

Mastary Admin

Check Also

29 25 3

প্রবল তুষারপাতের কারণে বন্ধ এভারেস্ট, দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার

ঢাকা, বুধবার ২৯ অক্টোবর ২০২৫মাসস অস্বাভাবিক তুষারপাতের কারণে বুধবার থেকে এভারেস্ট অঞ্চলের নেপালি ও চীনা দিক …